বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র সজীবের মন কয়েকদিন ধরে খুবই খারাপ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার বন্ধুরা দলবেঁধে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেলেও সে কোথায় যাচ্ছে না, কারণ তার বাসে উঠলেই বমি বমি পায়। যার ফলে তার ভ্রমণের ইচ্ছাটাই চলে যায়। গাড়িতে উঠলে এমন বমি বমি ভাব হওয়া বা বমিহওয়া অথবা মাথা ঘোরাকে বলা হয় মোশন সিকনেস (motion sickness)। মোশন সিকনেসের ফলে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়, বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে পড়তে হয়। আজ আমি আপনাদের জানাব, বাসে বমি হওয়ার কারণ ও এর প্রতিকারের উপায়গুলো সম্পর্কে।
বাসে বমি হওয়ার কারণ ও এর প্রতিকার
বাসের মধ্যে বমি কেন হয়?
সাধারণত বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে উঠলে এই ধরনের মোশন সিকনেস হয়ে থাকে। গতি ও জড়তার কারণে মানুষের মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার বাহনগুলোতে বমির সমস্যা হতে পারে। অন্তঃকর্ণ শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। যখন আমরা গাড়িতে চড়ি তখন অন্তঃকর্ণ খবর পাঠায় মস্তিষ্কে যে সে গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আমাদের চোখ বলে আলাদা আর এক কথা। কারণ চোখের সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো সব সময় স্থির থাকে। মোশন সিকনেস হওয়ার জন্য দায়ী হলো চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতা। এছাড়া যদি আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে, তবে বমি হতে পারে, অসুস্থতার কারণে বমি হতে পারে, অনেক সময় বাজে কোন ধরনের গন্ধের ফলেও বমি হতে পারে।
ভ্রমনের সময় বমি থেকে মুক্তির উপায়
১) গাড়িতে উঠলে বমি হতে পারে এমন চিন্তা কখনো করবেন না। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে, লম্বা লম্বা শ্বাসও আপনি নিতে পারেন। বমির কথা ভুলে থাকার জন্য আপনি গানও শুনতে পারেন।
২) গাড়ি যখন চলন্ত অবস্থায় থাকবে, তখন বই পড়া ও মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩) গাড়ির সামনের দিকে বসার চেষ্টা করবেন। যদি পেছনের দিকে বসেন তবে বেশি পরিমাণ গতিশীল মনে হবে।
৪) গাড়ির জানালার পাশের দিকে বসার চেষ্টা করুন। জানালা খোলা রাখবেন, বাইরের বাতাসকে গাড়ির অভ্যন্তরে আসতে দিতে হবে। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। গাড়ির ভেতরের দিকে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
৫) যেদিকে গাড়ি চলছে সেদিক পেছন দিয়ে বসলে বমি ভাব বেশি হয়ে থাকে।
৬) অন্য যাত্রীর বমি করা দেখলেও অনেক সময় বমি পায়। এক্ষেত্র সেদিকে মনোযোগ না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৭) হালকা ভাবে চোখ বন্ধ করেও রাখতে পারেন। ভ্রমণের পূর্বের রাতে ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
৮) কখনই খালি পেটে ভ্রমণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত না। ভ্রমণের পূ্র্বে হালকা কিছু খেয়ে তারপর বাসে উঠুন। ভ্রমণের পূর্বে ভারী খাবার খাবেন না। যাত্রার সময় বাইরের কোনো প্রকার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।যে সকল খাবার খেলে এসিডিটি হয়, এমন সব খাবার ভ্রমনের সময় না খাওয়াই ভলো।
৯) আদা কুঁচি চিবুতে পারেন বমি ভাব দূর করতে। প্রয়োজনে আপনি আদা চাও খেতে পারেন। কারণ আদা বমি রোধের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পাশাপাশি আদা হজমেও সাহায্য করে থাকে।
১০) খাবার হজম জনিত সমস্যার কারণে যদি বমি হয়, তবে আপনি দারুচিনি খেতে পারেন। খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে দারুচিনি।
১১) বমি ভাব দূর করতে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। এছাড়াও লেবু পাতার গন্ধে এবং কমলা লেবুর গন্ধেও বেশিরভাগ সময় বমি ভাব দূর হয়। গরম লেবুর পানিতে একটু লবণ মিশ্রণ করেও খাওয়া যেতে পারে। মাথাব্যথা, বমি এবং বমিবমি ভাবকে দূর করতে এই পানি অনেক উপকারী। কিন্তু আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য বমি হয়, তবে আপনার লেবু না খাওয়াই ভালো।
১২) বমি ভাবকে বিদায় জানাতে ও সাথে মুখের দুর্গন্ধকে দূর করতে মুখে এক টুকরা লবঙ্গ দিতে পারেন।
১৩) যদি খুব বেশি সমস্যা হয়, তবে সেক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বমি নিরোধক ওষুধ সেবন করতে পারেন।
১৪) অ্যাসিডিটির সমস্যার কারণে বমি ভাব হলে পুদিনাপাতা বা পুদিনাপাতা দ্বারা চা বানিয়েও খেতে পারেন।
১৫) যদি খুব দীর্ঘ ভ্রমণ করেন তবে মাঝে বিরতি নিতে পারেন। ঐ সময়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে।
১৬) মুখ এবং মনকে ব্যস্ত রাখতে চুইংগাম খেতে পারেন। বমি ভাব হবে না।
উপরিউক্ত কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে পারলে বাসে বা অন্য গাড়িতে বমি হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আশা করি, এই তথ্যগুলো থেকে আপনার উপকার হবে। আপনি যদি এই ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিত পেতে চান, তবে আমাদের সাথেই থাকবেন। আর আমাদের নিকট থেকে কোন প্রকারের তথ্য পেতে আপনি বেশি আগ্রহী, অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে জানাবেন।আপনার জানতে চাওয়া বিষয়টি যদি মার্জিত এবং রূচিশীল হয়, অবশ্যই আমরা ঐ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব পোস্ট করার জন্য সর্বাত্মক চেস্টা করব।
0 Comments