গরমে ঘাম বেশি হওয়ার ফলে কিছু চর্মরোগ হয়ে থাকে।এজন্য এই সময়ে ঘাম হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।এখন গরম পড়েছে বেশ। আবার হঠাৎ বৃষ্টিও হচ্ছে। আবহাওয়ার মেজাজও বোঝা দায়। এই গরমে এখন ঘেমে-নেয়ে উঠছেন তো আবার আপনি বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ঠান্ডা পানি পান ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রবণতাও অনেক বেড়ে যায়। পরিবেশের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ও সংক্রমণও হয় বেড়ে যায়। আমাদের দেশে কিছু রোগবালাই গরমেই বেশি হয়। প্রতিবছর গ্রীষ্ম, বর্ষাকালে রোগগুলোর প্রকোপ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তবে একটু সচেতন হলেই এই রোগগুলোকে এড়ানো সম্ভব।
পানিশূন্যতা
গরমের সময় শরীর পানি হারিয়ে থাকে। তাই সহজেই পানিশূন্যতার সমস্যা হয়। এ জন্য গরমে বারবার পানি পান করতে হবে। মনে রাখবেন, পানির অভাব কখনোই চা, কফি, জুস, কোমল পানীয় ইত্যাদি দিয়ে পূরণ হয় না। বিশুদ্ধ পানিই পান করা উচিত বেশি বেশি করে। আমরা ঘামের সাথে পানি ও খনিজ লবণ বা ইলেকট্রোলাইটস দুটোই হারাই। এজন্য একটু ডাবের পানি, লবণ পানি বা প্রয়োজনে স্যালাইন খেতে হবে। চোখ–মুখ গর্তে ঢুকে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, প্রস্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি হলো পানিশূন্যতা রোগের লক্ষণ। পরিবারে ছোট শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা পানিশূন্য হয়ে পড়লেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন।
টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস
এ সময়ে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পায়। যার ভিতর অন্যতম হলো টাইফয়েড। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়ায়। উচ্চমাত্রার জ্বর, কখনো ডায়রিয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি হলো এই রোগের উপসর্গ। এই রোগ অর্থাৎ টায়ফয়েড হলে অ্যান্টিবায়োটিক উচ্চমাত্রায় ও একটু বেশি মেয়াদে দিতে হয়, কখনো কখনো শিরায় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ রোগের চিকিৎসা অন্যান্য সংক্রমণজনিত চিকিৎসার থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। রক্তের কালচারের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় না দিলে কাজ কম হয়। কিন্তু সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে জ্বর হলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই নিজে নিজে এক কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা। এ কারণে পরবর্তী সময়ে রোগ শনাক্ত হতে সমস্যা হয় এবং ভোগান্তি ও খরচ দুটোই বেড়ে যায়। এজন্য জ্বর যদি উচ্চমাত্রার হয় ও ৫-৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তবে সে ক্ষেত্রে টাইফয়েডের পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নিন।
গরমের সময় পানিবাহিত জন্ডিস বা হেপাটাইটিস-ই এবং এ–এর প্রকোপ বেড়ে যায়। এর ফলে অরুচি, চোখ ও প্রস্রাব হলুদ রং ধারণ করা, দুর্বলতা, জ্বর হয়ে থাকে। হেপাটাইটিসের চিকিৎসা হলো পূর্ণ বিশ্রাম এবং কোনো ওষুধ না খাওয়া। এটি এমনিতেই সেরে যায়।
সর্দি-গর্মি
গরমকালে ফ্লু বা সর্দি–গর্মির রোগীও বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের।সাধারণ সর্দি-গর্মি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ৫-৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। এর ফলে জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, কাশি, সর্দি, নাক বন্ধ, চোখ লাল, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড পরীক্ষাও করতে হবে, কারণ কোভিডের লক্ষণগুলো ফ্লুর মতোই হয়ে থাকে। যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সাধারণ প্যারাসিটামল, অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। গরম স্যুপ, গরম আদা–চা ইত্যাদি খেলে আরাম হয়ে থাকে। বিশ্রাম নিতে হবে আর প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
হিট স্ট্রোক
প্রচণ্ড গরমে অনেকক্ষণ রোদে বা বাইরে থাকার ফলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। হিট স্ট্রোক হলে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায় ও ত্বক একেবারে পানিশূন্য হয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি ভুল বকতে পারে বা অর্ধচেতন বা অচেতনও হতে পারে। সাধারণত দীর্ঘ সময় বাইরে বা গরম পরিবেশে যাঁরা কাজ করে থাকেন, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক এবং দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়ালেও এমন সমস্যা হতে পারে। কারও যদি এমন হতে দেখা যায়, তবে দ্রুত তাকে অপেক্ষাকৃত শীতল জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে এবং তার জামাকাপড় খুলে দিতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে তার গা মুছে দিতে হবে। চেতনা থাকলে তার মুখে পানি দিতে হবে।কিন্তু অজ্ঞান হলে জোর করে দেওয়া যাবে না। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
চর্মরোগ
গরমে ঘাম বেশি হওয়ার ফলে কিছু চর্ম রোগও হয়। যেমন ঘামাচি বা ছত্রাকের সংক্রমণ। অনেকে ঘামাচির স্থান চুলকে সংক্রমণ করে ফেলে। ত্বক লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। ঘামাচি প্রতিরোধে ঘামে ভেজা কাপড় পাল্টে ফেলতে হবে বা ঘাম মুছে ফেলতে হবে। অন্তর্বাস, মোজা ইত্যাদি কখনোই না ধুয়ে আবার পরদিন পরা যাবে না।
বদহজম
গরমকালে তাপমাত্রা বেশি বলে খাবার নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। সেই খাবার আমরা খেলে ফুড পয়জনিং হয়। কোনো খাবার খেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি বমি, ডায়রিয়া ও জ্বর শুরু হয়, তবে বুঝতে হবে বদহজম বা ফুড পয়জনিং হয়েছে। বাসি ও বাইরের খাবার থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে। ফ্রিজের খাবার খেতে হলে ভালো করে গরম করে খেতে হবে।
এই সময়ে সুস্থ থাকতে হলে যা যা করবেন-
১/ প্রচুর পরিমাণ পানি পান করবেন। এছাড়াও মাঝেমধ্যে ডাবের পানি, লবণ পানি, স্যালাইন পান করবেন।
২/ রাস্তাঘাটের খোলা পানি, আখের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি পান করবেন না। বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যেতে হবে।
৩/ অতিরিক্ত চা-কফি শরীরকে আরও পানিশূন্য করে দিতে পারে।
৪/ হালকা রঙের পাতলা সুতি ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরতে হবে।যার ফলে বাতাস চলাচল করতে পারবে। ঘেমে গেলে ঘাম মুছে ফেলতে হবে বা কাপড় পাল্টে ফেলতে হবে। কারণ ঘাম যদি বসে যায়,তবে ঠান্ডা লেগে যাবে।
৫/ বাইরের খোলা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিং না। এর ফলে ডায়রিয়া ও খাবারে বিষক্রিয়া (ফুড পয়জনিং) হতে পারে। বাড়িতেও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করতে হবে।
৬/ খাবারের আগে-পরে, প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময় সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন। খাবার ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরে ভালোভাবে গরম করে খান। বাসি খাদ্য না খাওয়াই ভালো।
৭/ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা এবং বেলা ৩টা বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রখর রোদে সম্ভব হলে না বেরোনোই আপনার জন্য ভালো। বের হতে হলে হালকা জামাকাপড় পরতে হবে এবং ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
৮/ প্রতিদিন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। ঘামে ভেজা কাপড় বারবার পরার ফলে ত্বকে সমস্যা হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
0 Comments